Thursday, August 5, 2021

Machher Chop (Fish Croquettes)

Chop, the fried fritters or croquettes is the most widely available and popular snack in West Bengal. Chop has its vegetarian and non-vegetarian varieties. In the vegetarian categories, the most common is “Alur Chop”,  the potato croquettes. However, it has its more intricate variation also; Vegetable Chop, Mochar Chop (made with Banana Flower) etc are the most familiar ones. The non-vegetarian category has its all possible variety; fish, chicken, mutton, egg, chingri (shrimp) – almost anything can be used as the filling.  This is a nearly inevitable snack during all our train journeys. Whenever it’s raining, it accompanies the tea to make the rain even more enjoyable.

Apart from the veg or non-veg classification, chop can be of basically two types depending on the coating. One is with besan batter coating, the other one is coated with bread crumbs. Here, in the Mach her chop, we will use bread crumbs.

 



Cuisine:

Bengali

Total time:

 1 hr 45 mins

Preparation time:

30 mins

Idle time:

30 mins

Cooking time:

45 mins

Serves:

 4 (8 croquettes)

 

Primary ingredient:

1. Fish (Katla / Rohu / Bhetki / Basa / Aar) – 4 standard size piece (boneless fillet can also be used)

For boiling the fish:

  1. Water                                          -              500 ml or as required
  2. Turmeric powder                        -              1 tsp

Ingredient for making “Chop er pur” (the mixture for the croquettes):

  1. Mustard oil                         -              4 Tbsp
  2. Green cardamom                –            4 pc
  3. Clove                                     -              4 pc
  4. Cinnamon stick                   -              1 ½  - 2 inch
  5. Garlic                                     -              1 – 1 ½ tsp, minced / finely chopped
  6. Onion                                    -              2 medium to large, finely chopped
  7. Ginger                                  -              2 tbsp minced (paste can also be used, but not preferable)
  8. Raisins                                  -              a handful
  9. Green chilli                         -              4, finely chopped            
  10. Fish                                        -              Boiled and de-boned (if boneless fillets are used, de-boning would not be required)
  11. Turmeric Powder             -              1 tsp
  12. Red chilli Powder             -              2 tsp
  13. Salt                                         -              To taste
  14. Sugar                                     -              1 ½ tsp
  15. Boiled Potato                     -              2 large, smashed
  16. Garam Masala Powder  -              1 tsp
  17. Coriander leave                                -              a handful, finely chopped

For shaping the croquettes:

  1. Bread Crumb                      -              2 cups (you can make the fresh bread crumbs at home.  For that, take 4 normal slices of white bread, toast it till crispy, and then grind them coarsely)
  2. Egg                                         -              2, beaten with 1 tbsp of water

For frying the croquettes :

 1.    Vegetable Oil                     –             As required for deep frying

 

Method:

  1. First, boil the fish with sufficient water and turmeric powder for 10 mins. Let it cool.
  2. De-bone the fish. Keep it aside.
  3. For preparing the mixture, heat oil in a pan. Add slightly crushed whole garam masala.
  4. After a while, when nice aroma of garam masala is released in to the oil, add chopped garlic. Sauté till the raw aroma of the garlic is gone.
  5. Add chopped onion and fry till golden brown.
  6. Add chopped Ginger and fry for 1-2 minutes. Add raisins,  green chilli, boiled fish.
  7. Add turmeric powder, red chilli powder, salt and sugar. Mix well and continue to stir. Keep in mind that, we will NOT use any water while preparing the mixture and will cook keeping the pan uncovered.
  8. Fry the fish with spices till its colour changes to dark golden brown. There will be a nice aroma of fried fish. At this stage add smashed potato, chopped coriander leave and garam masala powder. Mix them very well.
  9. When done, keep the mixture aside to cool down to the workable temperature.
  10. To make the croquettes, divide the mixture into 8 equal portions.  Taking one at a time, shape it into an oval patty.
  11. Take one patty, coat it lightly with bread crumbs. Deep it into the beaten egg and then coat it again with bread crumbs.
  12. Repeat the process with other patties.
  13. When you are done with 8 croquettes, doubly coated with bread crumbs, keep them in the refrigerator for 30 mins.
  14. Take them out and wait for another 10 mins.
  15. Heat oil in a frying pan. When medium hot, put the croquettes into the oil. Throughout the frying process, temperature of the oil should be kept medium. If the oil is too hot, bread crumbs will get burnt easily.
  16. Fry  for 10-12 mins, Rotating the croquettes in between.
  17. When the colour changes to light brown, remove them into tissue paper.
  18. Serve hot with Kasundi (recipe follows).

 

 

 

 

 

 

Tuesday, February 11, 2020

Lakshadweep - The land of Corals and Blue Lagoon

যাত্রা শুরু...

ফ্লাইট ডিলে হয়ে হয়ে অবশেষে মধ্য রাতে কোচিন এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম যখন, বন্ধু Sajith গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে আমাকে গেস্ট হাউস অবধি পৌঁছে দেবে বলে। সাউদার্ন নেভাল কমান্ড এর গেস্ট হাউসে যখন পৌঁছলাম, তখন রাত ১.১৫। "ভারতীয় নৌসেনা সদাই আপনার সেবায়" - এটি আরো একবার বুঝলাম এখানে এসে। একটি ছেলে আমাকে রিসিভ করবে বলে গেটের সামনে অপেক্ষা করছিল, আমার ফোনের অপেক্ষা টুকুও না করে। ঘুম হবে না জেনেও বিছানায় গড়িয়ে নিলাম কিছুক্ষণ। সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম জেটির উদ্দেশ্যে, যেখান থেকে লাক্ষাদ্বীপগামী জাহাজ ছাড়ে। স্পোর্টস (আয়োজক সংস্থা)-র অফিস থেকে বোর্ডিং পাস, টি-শার্ট আর টুপি হাতে নিয়ে উঠে বসলাম বাসে, পোর্টের উদ্দেশ্যে। যথারীতি চারপাশে প্রচুর বাঙালী। জাহাজের কেবিনটা অত্যন্ত সুন্দর, পরিপাটি । জাহাজ ছাড়ার কথা দুপুর আড়াইটে। লাঞ্চ জাহাজেই। টুনা মাছ দেখে অধিকাংশ লোক প্রথমে অতি উৎসাহিত হয়ে পড়লেও খেয়ে বেশ হতাশ।
আচমকা বজ্র-বিদ্যুৎসহ বৃষ্টি। জাহাজের পাবলিক এনাউন্সমেন্ট সিস্টেম পুড়ে গেল তার দাপটে। সেসব সারিয়ে জাহাজ ছাড়ল প্রায় রাত সাড়ে আটটা। অত:পর আমাদের সমুদ্রে পাড়ি।



দ্বিতীয় দিন...

গতকাল রাতেই স্পোর্টস (আগেই বলেছি, এটি আয়োজক সংস্থার নাম। নাম ঠিক নয়, অ্যাক্রোনিম। Society for promotion of Nature Tourism and Sports)-এর ওয়েলফেয়ার অফিসার আমাদের পুরো যাত্রাপথের আগাম বিবরণ দিয়ে রেখেছেন। বিশেষ করে টাইম শিডিউল আর সুরক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে বারবার করে বলে দিয়েছেন উনি। ওয়াটার স্পোর্টস ম্যানেজার বিভিন্ন দ্বীপের বিভিন্ন ওয়াটার স্পোর্টস সম্পর্কেও আভাস দিয়েছেন। কাল রাত্রে জাহাজের কেবিনে শুয়ে তেমন আলাদা কিছুই বুঝতে পারিনি। ট্রেনের বার্থের মতোই মনে হল। সমুদ্রও মোটামুটি শান্ত, তাই খুব বেশি দুলুনিও বুঝতে পারিনি।
সকালে চা এর সময় ছটা থেকে সাড়ে ছটা। সেই মতো সকাল সকাল উঠে চলে গেলাম ডাইনিং হলে। চা খেয়েই সোজা পাঁচ তলার ডেকে। গিয়ে দেখি পুব আকাশে এক অপার্থিব লাল রং। ছবিতে ধরা পড়েনি সেটা, আগেই বলে রাখি। সে এক অবিশ্বাস্য লাল, রক্ত ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যেন। আর আমাদের জাহাজ তখন মাঝসমুদ্রে একা ভেসে চলছে। এ এক দারুন অনুভূতি। যেন গোটা পৃথিবীতে এই জাহাজটা, এই জাহাজের যাত্রীরা ছাড়া আর কেউ নেই, কোথাও নেই।



কাল জাহাজ দেরিতে ছেড়েছে বলে আজ পৌঁছতে দেরি হবে। আজ আমাদের গন্তব্য কাভারাত্তি আইল্যান্ড। এটি লাক্ষাদ্বীপের রাজধানী। তিতাস আগেই বলে দিয়েছিল এখানে খুব ভিড় থাকে, তাই আগেই ঠিক করে রেখেছি এখানে কোনো ওয়াটার অ্যাক্টিভিটি করব না। আজ আমাদের জাহাজ থেকে নামার জন্য অন্য দরজা - এম্বারকেশন ডোর। কাল আমরা ডিট্যাচেবল সিঁড়ি দিয়ে সরাসরি তিনতলার ডেকে উঠেছিলাম। আজকের এম্বারকেশন ডোর একেবারে নিচের তলায়। জাহাজ দ্বীপের খুব কাছে যেতে পারবে না। ছোট ছোট বোটে করে আমরা দ্বীপে যাব।
সকালে সি-সিকনেসের ভয়ে খুব হালকা প্রাতঃরাশ করলেও একটু গা গোলানো ভাব মনে হল আমার। যাক গে, ওসবে বেশি পাত্তা দিতে নেই। কাভারাত্তি পৌঁছে একটু হতাশ হলাম। খুব আহামরি সুন্দর কিছু মনে হল না। দ্বীপে পৌঁছতেই ডাব দিয়ে আমাদের স্বাগত জানানো হল। তারপর গেলাম গ্লাস বটম বোট রাইডে, যেটাতে বোটের তলায় লাগানো কাঁচের মাধ্যমে সমুদ্রের নিচের জগৎটাকে দেখা যায়। বিভিন্ন রকম কোরাল, মাছ, প্রচুর সমুদ্রশসা ইত্যাদি দেখা গেল। আগেই বললাম, এখানে আর কোনো ওয়াটার স্পোর্টসে যাব না।






সারাদিন বীচ এই ঘুরে বেড়ানো হল। আজকেও লাঞ্চে টুনা মাছ , তবে আজকেরটা কালকের থেকে ভালো 😊বিকেলে গাড়িতে করে যাওয়া হলো মেরিন অ্যাকোয়ারিয়াম দেখতে। ফিরে এসে চা খেতে খেতে ফোক ডান্স। চা এর সঙ্গে কলাপাতায় মোড়া ভাপা পাটিসাপটা। এটা আমার দারুন লেগেছে খেতে।
অস্তগামী সূর্যকে সাক্ষী রেখে আমাদের আজকের দিন শেষ হলো। এরপর আবার ছোট বোটে করে ঘরে ফেরা। হ্যাঁ, এখন কদিনের জন্যে জাহাজটাই আমাদের বাড়ি।



তৃতীয় দিন...

আজ প্রথমেই একটু আমাদের জাহাজটার কথা বলি। জাহাজটির নাম এম.ভি. কাভারাত্তি, প্রথম দিনের ছবিতেই দেখেছেন সবাই। পাঁচ তলা জাহাজ। একতলা আর দোতলায় বাঙ্ক আর তিন থেকে পাঁচতলায় কেবিন ক্লাসের থাকার ব্যবস্থা। তিনতলায় ব্যালকনির মতো ডেক আছে। এরকম ডেক চারতলায় খুব ছোট মাপের। পাঁচতলায় একটি সুইমিংপুল আছে, যদিও তাতে জল নেই 😄সুইমিংপুলের ধরে চেয়ার পাতা আছে বসার জন্য। এর ওপরে জাহাজের ছাদ। বিশাল খেলা জায়গা। জাহাজের পিছনের দিকের ছাদে রয়েছে একটি হেলিপ্যাড। চার তলায় একপ্রান্তে রিক্রিয়েশন রুম, অন্য প্রান্তে ডাইনিং রুম। রিক্রিয়েশন রুমে দুটি বড় স্ক্রিনের টিভি আছে এবং আছে কিছু কিছু ইনডোর গেমের ব্যবস্থা। ডাইনিং রুম দুটি অংশে ভাগ করা, আমিষ এবং নিরামিষভোজী যাত্রীদের জন্য। এছাড়া জাহাজে আছে একটি ছোট্ট ক্যাফেটেরিয়া, যেখানে বিস্কিট, চকলেট, চিপস, কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদি পাওয়া যায়। এবং আছে একটি হসপিটাল, আলাদা আলাদা মেল এবং ফিমেল ওয়ার্ডসহ। এছাড়া আছে একটি ইনফর্মেশন ডেস্ক।
আমাদের জাহাজটিতে মোট ৭০০ যাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের এই সমুদ্রম প্যাকেজে আমরা আছি ১৮০ জন। পুরো যাত্রাপথে সকলের মুখ চেনাও হয়ে ওঠেনি, যদিও কয়েকজনের সঙ্গে খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। সেকথা পরে বলব। যাই হোক, যা বলছিলাম... এই এতজন যাত্রীর সুরক্ষার জন্য আছে ৪ টে লাইফ বোট আর ২৫ টা লাইফ রাফট। তিন থেকে পাঁচতলার প্রতিটি কেবিনে মাথাপিছু দুটি করে লাইফ জ্যাকেট রাখা আছে আলমারিতে; একটা নিয়ার-শোর জ্যাকেট, যেটা রোজ আমাদের বোটে যাতায়াতের সময়ে পড়তে হয়; আর অন্যটা আপদকালীন প্রয়োজনে, অফ-শোর সমুদ্রের জন্য। প্রতিটি কেবিনে, প্রতিটি বেডের পাশে লেখা আছে কাকে কোন লাইফ বোটের দিকে যেতে হবে বিপদের সময়ে, যাতে কোন একটি বোটের দিকে অনাবশ্যক ভিড় না তৈরি হয় এবং সব যাত্রী অহেতুক সময় নষ্ট না করে চারটে লাইফ বোটে ভাগাভাগি করে চড়ার সুযোগ পায়। প্রতিটি করিডোরে পর্যাপ্ত দিকনির্দেশক সূচক, বিভিন্ন যায়গায় যাওয়ার। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত ব্যবস্থাপনা।





আজ আমরা যাব মিনিকয় আইল্যাণ্ড। লাক্ষাদ্বীপের অন্যতম সুন্দর দ্বীপ। মালদ্বীপের খুব কাছে, মাত্র ৭০ নটিকাল মাইল হওয়ায় ওখানকার প্রকৃতির সঙ্গে প্রচুর সাদৃশ্য। শুধু প্রকৃতিই বা বলি কেন, সমাজ-সংস্কৃতিরও অনেক মিল। আমাদের নিজেদের দেশে এত সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে থাক সত্ত্বেও আমরা কেন বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবি বলুন তো? শুধুই স্টেটাস মেইনটেন করতে? আমি এমন বহু লোককে জানি, যারা মালদ্বীপ ঘুরে এসেছে, অথচ আন্দামান বা লাক্ষাদ্বীপ যাওয়ার কথা মনেও আনেনি!



সৌন্দর্য্যর কথা যখন উঠলই, তাহলে এবার মিনিকয়-এর কথায় আসি। দ্বীপে এসে প্রথমেই যাওয়া হল লাইট হাউস। প্রায় ৩০০ সিঁড়ি বেয়ে লাইট হাউসের মাথায় উঠে পুরো দ্বীপটা দেখা যায় । সাদা বালির সৈকত, আর চোখ জোড়ানো ফিরোজা নীল জল। সে এক এমন নেশা, যে জল থেকে চোখ সরানো যায় না; ঘন্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকলেও ক্লান্তি আসে না। কাল কাভারাত্তি যতটা হতাশ করেছিল, আজ মিনিকয় তা সুদে-আসলে মিটিয়ে দিচ্ছে। 





আজ ঠিক করেই এসেছি স্কুবা-ডাইভিং করব। দ্বীপে এসেই তাই ওটার জন্য নাম রেজিস্টার করে নিলাম। যে সময়টা হাতে আছে, সেটা কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে গেলাম কায়াকিং করতে। এটি আসলে একটি রাবারের বোট, দাঁড় দিয়ে চলতে হবে; ডান দিকে যাওয়ার জন্যে বাঁ দিকে আর বাঁ দিকে যাওয়ার জন্যে ডান দিকে দাঁড় চলতে হবে। কয়েক মিনিট লাগলো একটু সড়গড় হতে, আর তারপর থেকে ব্যাপারটা যে কী মজার লেগেছে আমার! জল থেকে উঠতে ইচ্ছেই করে না আর! যতটা সীমারেখা টানা আছে লাল পতাকা দিয়ে, তার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে এলাম ।





এরপর স্কুবা। রোদে পুড়ে প্রায় ঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করার পর আমার টার্ন এল। আগে আন্দামানে স্কুবা করার অভিজ্ঞতা থাকলেও প্রথমে একটু ব্রীদিং প্র্যাকটিস করতে হল। জলের নিচের জগত্ হাতের নাগালে দেখতে পাওয়ার অভিজ্ঞতাটা ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তবে আমার আন্দামানের অভিজ্ঞতাটা বেশি ভাল ছিল মনে হল; হতে পারে প্রথমবারের উত্তেজনা, বা প্রথম অভিজ্ঞতার মন্ত্রমুগ্ধতা তার অন্যতম কারণ, তবে কোরালের বৈচিত্র্য ওখানে যেন একটু বেশি। প্রথমবার জলের নিচের অদ্ভুত নিস্তব্ধতা যতটা অভিভূত করেছিল, এবার সেটা হল না। কিন্তু তাও অসাধারণ অভিজ্ঞতা।



ফিরে এসে স্নান সেরে খাওয়া-দাওয়া। টুনা মাছ রান্নার মান উত্তরোত্তর উন্নতি করছে 😄দ্বীপের যে দিকেই তাকাই, সব ছবির মত সুন্দর। এখানে আজ একজন নতুন বন্ধু হয়েছে, দীপ্র। পাহাড়প্রেমী, ট্রেক করে; অতএব, বুঝতেই পারছেন, বন্ধুত্ব না হয়ে থাকতে পারে কী? বিকেলে ওর সঙ্গে হাঁটা হল দ্বীপের প্রায় একটা প্রান্ত পর্যন্ত, যেখানে রয়েছে নৌসেনার একটা অফিস। আজও চায়ের সঙ্গে সেই কলাপাতার পাটিসাপটা, তবে আজ ভেতরে কলার পুর, খেতে ভাল না তেমন।
বাড়ি, থুড়ি, জাহাজে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়েই কেবিনের গ্লাসহোল দিয়ে চোখে পড়ল সূর্যাস্তের ছটা। মায়াবী আলো, অদ্ভুত রঙ, আর পুরো দিগন্ত জুড়ে সূর্যের রশ্মি ছিটকে বেরোচ্ছে। ছুটে বেরিয়ে এলাম ডেকে।



আজকের মত দিন শেষ। অপেক্ষা, কাল এই স্বপ্নের দেশ আমাদের জন্যে কী পসরা সাজিয়ে রেখেছে।

চতুর্থ দিন...

আজকের সকালের মোটামুটি একই রুটিন। আজ আমাদের গন্তব্য কালপেনি আইল্যান্ড। এখানেও সেই একই রকম নেশা ধরানো জলের রঙ। এখানে কোরালের আশ্চর্য কেরামতিতে বিশাল বিস্তৃত লেগুন তৈরি হয়েছে। সমুদ্র যেখানে অগভীর, সূর্যের প্রতিফলন সেখানেই ঢেলে দিচ্ছে ওই ফিরোজা নীল। ওয়াটার স্পোর্টসের জন্যে যেতে হবে লেগুনের অপর প্রান্তে আর একটি ছোট দ্বীপে, স্পিড বোটে। গেলাম। এখানে দারুন স্নোরকেলিং করা হল। কমপ্লিমেন্টারি হলেও ইন্সট্রাক্টর করালো অনেক সময় ধরে। এখানে পায়ের তলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিলবিল করছে অসংখ্য সমুদ্রশসা। কোরালে পা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে চটি বা জুতো পরা এখানে আবশ্যিক।





শুনলাম, এখানেও কমপ্লিমেন্টারি কায়াকিং করা যাবে, এবং মজার কথা, এখানে কোনো সীমানা নির্ধারিত নেই; অগভীর লেগুনের মধ্যেই আছি বলে নিশ্চয়ই। ঝাঁপিয়ে পড়লাম ! পাশে অন্য একটা কায়াকে সঙ্গী পেলাম Neeraj বলে একটি কেরালার ছেলেকে। ছেলেটি ছবি তোলে অসাধারণ। এরপর হল আসল মজা। কালপেনি আর এখন যে দ্বীপটায় রয়েছি, তার সাথে কোণাকুনি আরো ছোট ছোট দুটি দ্বীপ দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছুটা দূরে। সেদিকে দেখি কেউ যাচ্ছে না। নীরজকে বললাম- যাবে নাকি ওই দ্বীপটায়? সেও এক কথায় রাজি। চললাম দুজনে, কায়াকের দাঁড় বাইতে বাইতে।



ছোট বেলায় জুল ভার্ন ভীষণ পছন্দের ছিলPomeli, তোর মনে আছে নিশ্চই। মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড পড়ে গায়ে কাঁটা দিত তখন। পমেলি, তুই বলছিলি আমি তো এত এডভেঞ্চারাস ছিলাম না। তা বোধহয় নয়, জানিস? আসলে তখন অনেক কিছু করার স্বাধীনতা ছিল না; সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের মেয়েদের যেমন হয় আর কি, একটা গন্ডি থাকে, ইচ্ছে পূরণ করার সীমারেখা টানা থাকে। তাই অনেক সাধই শুধু স্বপ্ন হয়ে থেকে গেছিল। এখন শুধু সেগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সাহসটা বেড়েছে।
যখন ওই নির্জন দ্বীপটায় পৌঁছলাম, নিজেকে মনে হল লেডি রবিনসন ক্রুশো 😄কি দারুন উত্তেজনা। কায়াক থেকে নেমে একটু ঘুরে দেখেও নিলাম দুজনে মিলে। ভাবছি, এবার পাশের অন্য দ্বীপটাতেও যাবো, অমনি একটা স্পিড বোট এসে একটু ধমক দিল আমাদের; এই দ্বীপে নাকি কেউ আসে না, আমরা যেন ফিরে যাই। অগত্যা 😪
আরো কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ফিরে আসা হলো কালপেনিতে। আজকেও লাঞ্চের পর দ্বীপ ঘুরে দেখা হবে। ও হ্যাঁ, টুনা মাছ তার উন্নতির গ্রাফ বজায় রেখেছে ঊর্ধ্বমুখে। কেনাকাটি করার সুযোগ পেয়ে সে কি উন্মাদনা সবার!! আমি সাহস পাইনি ওই ভিড় ঠেলে কিছু কেনার।

কাল সকালেই আমাদের যাত্রা শেষ। ফিরে যাব কোচি। এই চারদিনে রীতিমতো একটা পরিবার গড়ে উঠেছে এখানে। Deepro আর নীরজের কথা তো বলেইছি, তার সাথে বলি খড়গপুর থেকে আসা চিন্ময়দা আর Mahua দি, পুনের প্রবাসী বাঙালি পরিবার যাদের একটি মেয়ের ডাকনাম মমSnigdha আন্টি যে দুদিনের আলাপেই 'তুই' করে আপন করে নিতে পারেJhumur আন্টি যাকে দেখে মায়ের মতো মনে হয় - এদের কথাও না বললেই নয়। এদের সবার থেকে পাওয়া ভালোবাসাগুলো আমার বৎসরান্তের প্রাপ্তি।একা বেড়াতে এসেছি বলে একটু প্রচ্ছন্ন বাহবা পেয়েছি অনেকের থেকে, যেটা সাহস জুগিয়েছে, ভরসা দিয়েছে। হাবিব স্যার অার বশির স্যার, যারা পুরো যাত্রাটায় আমাদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিল, তাদের কথা আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়।
ভালো থেকো সবাই, ভালো থেকো লাক্ষাদ্বীপ।